
প্রকাশিত: Thu, Dec 15, 2022 4:34 AM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 6:07 AM
মরক্কো ইউরোপীয়দের সঙ্গে মানিয়ে চললেও আর্জেন্টিনা এখনো তাদের বিপ্লবী নেতা ‘চে গুয়েভারা’কে বুকে ধারণ করে শোষিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ে
শারফিন শাহ্
যদিও মরক্কো ৯৯ শতাংশ মুসলমানের দেশ, তবু এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় জীবনযাপনের আবহ। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের পথ অনুসরণ করে মরক্কো মুখাবৃত হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। মরক্কো প্রতি বছর ৪ কোটি মদের বোতল তৈরি করে থাকে। এছাড়াও মরক্কো তার চিরন্তন বন্ধু আমেরিকার পরামর্শ অনুযায়ী ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তি করে মোটামুটি ইসরায়েলের সমর্থক হিসেবেও পরিচিত। সুতরাং বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে যারা ধর্মীয় সূত্রে মরক্কোর প্রতি অনুরক্ত হবেন, তারা ভুল করবেন।
মরক্কো যেহেতু ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল সেহেতু সেখানে আজও ফরাসি সংস্কৃতির ছিটেফোঁটা রয়ে গেছে। কোনো কোনো শহরে ফরাসিদের মতো জীবনযাপনও চলে। দুনিয়া কাঁপানো কিছু ফরাসি ও হলিউডি ছবির শ্যূটিংও হয়েছে মরক্কোতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দ্য মাম্মি, গ্লাডিয়েটর, ইনসেপশন, মিশন ইম্পসিবল, মেন ইন ব্ল্যাক প্রভৃতি।
মরক্কোর একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, সেদেশের শিক্ষা। ইউনেস্কো ও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রাচীনতম আল কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয় মরক্কোতে অবস্থিত। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ফাতিমা আল ফিহরি নামে একজন নারী। সবদিক থেকে দেখলে মরক্কোর শিক্ষা ব্যবস্থা ইউরোপের মতোই উন্নত ও অগ্রবর্তী।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান, পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশের চেয়ে পাঁচগুণ সমৃদ্ধ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেখানে নেই এমন না, বরং তা এতোটা গভীরতরভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কলা দেখাতে পারে না। একইভাবে আর্জেন্টিনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও বলা যায়। এই দেশটির শিক্ষাও বেশ উন্নত। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আর শিক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা।
আর্জেন্টিনার লোকজন যতো তার চেয়ে বেশি আর্জেন্টাইন সমর্থক বাংলাদেশে। এ নিয়ে আর্জেন্টিনার জনগণ বেশ আপ্লুত। তারা বাংলাদেশের পতাকা বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশি আর্জেন্টাইন ভক্তদের সাধুবাদ জানাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনা পুনরায় বাংলাদেশে তাদের দূতাবাস চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। এমনকি এটাও শোনা যাচ্ছে, মাত্র ৩০ হাজার টাকায় আর্জেন্টিনা ভ্রমণের সুযোগ মিলবে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য! এটা সত্যি হলে, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ফুটবল জাতীয়তাবাদের ক্ষুদ্র সীমানা পেরিয়ে বিশ্বকে এক করতে পারে অনায়াসে।
মরক্কোর মতো আর্জেন্টিনাও ইউরোপীয়দের উপনিবেশ ছিল। স্পেনের উপনিবেশ হিসেবে দীর্ঘকাল তাদের নানামুখী বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু মরক্কো ইউরোপীয়দের সঙ্গে মানিয়ে চললেও আর্জেন্টিনা তা করেনি। তারা এখনও তাদের বিপ্লবী নেতা ‘চে গুয়েভারা’কে বুকে ধারণ করে সমস্ত শোষিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ে। ম্যারাডোনা এজন্যই চে’র অলংকৃত টিশার্ট, ট্যাটুতে সজ্জিত হয়ে ফুটবল মাঠের গ্যালারিতে গর্জে উঠতেন। ফুটবল সমর্থকরা শুধু ফুটবলের জন্যেই মাঠে যায় না, এখানে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কারণও থাকে। রাজনৈতিক স্বচ্ছতার বিবেচনায় মরক্কোর চেয়ে আর্জেন্টিনা অনেকটাই এগিয়ে। তাই, শোষিত মানুষের পক্ষে থাকলে আর্জেন্টিনার সমর্থনই কাম্য।
ধান ভানতে শিবের গীত গাইলাম। কিন্তু এটাও ঠিক একটি দেশকে শুধু কেন ফুটবল দিয়েই চিনব। সেদেশের আরও যেসব গৌরবের নিদর্শন রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও তো জানা জরুরি। আর্জেন্টিনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মনোবিজ্ঞানী আর্জেন্টিনায় বসবাস করেন, প্রথম এনিমেশন ছবি তৈরি করেও দেশটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে মানুষের পরিচয় শনাক্তকরণের সূচনাও করেছে আর্জেন্টিনা। আরেকটি মজার তথ্য হচ্ছে, আর্জেন্টাইন সংস্কৃতির প্রতীক মধঁপযড়, যার বাংলা অর্থ রাখাল। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও রাখাল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক! লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
